আজ আমার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭-ই মার্চের ভাষণের
কথা খুবই মনে পড়ছে। তাঁর ভাষনের মতোই আমার খুব বলতে ইচ্ছে করছে- “ভাইয়েরা আমার আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের
মাঝে এসেছি।“ আসলে আজকে আমি খুবই ব্যথিত। আমি সঙ্গত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিতে
চাচ্ছি না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫ সালে আমার পদাচরণ। যখন আমি প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে
আসি তখন রাজনীতি ছিলো না বললেই চলে। তখন ক্যাম্পাসে শিক্ষক,কর্মকর্তা,কর্মচারীদের দাপটের
কাছে আমরা ছাত্ররা অনেক তুচ্ছ ছিলাম। তবে তখনও এতোটা খারাপ লাগতো না। কারণ, জীবনের
প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এতো বড় একটা জায়গা পেয়াছি। চোখে রঙ্গিন স্বপ্ন। আসলে তখন
ভাব-সাবই অন্যরকম ছিলো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা সব সময় একটা কাজ বেশি করে থাকে নিজের
বিশ্ববিদ্যালয়কে সবার সামনে ছোট হতে না দেয়া। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের
কাছে বালছাল। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কুকর্ম অন্যের কাছে তুলে না ধরে নিজেরা মনে
মনে পুষে রাখি।
যাই হোক দেখতে দেখতে প্রথম বর্ষ, প্রথম সেমিস্টার পার হয়ে গেলো।
প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সেমিস্টার এর প্রথমে এসেই রাজনীতির স্বাদ পেলাম। এই স্বাদ যে এতো
তিক্ত হবে সেটা তখনো বুঝিনি। আড়াই বছর রাজনীতির তিক্ত স্বাদ পাওয়ার পর, এখন বুঝতেছি
ঐ তিক্ত স্বাদের মধ্যেও একটা মজা ছিলো। বাক স্বাধীনতা বাদে,বাদ বাকি সকল স্বাধীনতাই
তখন বিরাজমান ছিলো। তখন আমাদের একটা সম্মান ছিলো। শিক্ষক,কর্মকর্তা,কর্মচারীরা তখন
আমাদের সাথে ধুনফুন করতে পারতো না। সবাই একটা ভয়ে থাকতো। এটার মজাই অন্যরকম ছিলো। রাজনীতির
তিক্ত স্বাদের মধ্যে যেগুলো সবাচাইতে খারাপ লাগতো- সেটা হলো কথা নাই বার্তা নাই মিছিল
করো। এই মিছিল কি শুধু একদিনের মিছিল? সাপ্তাহিক মিছিল, মাসিক মিছিল, ডিপার্টমেন্ট
ভিত্তিক মিছিল,ব্যাচ ভিত্তিক মিছিল ইত্যাদি। আর কোনো দিবস থাকলে অথবা ক্যাম্পাসে কোনো
রাজনৈতিক ব্যক্তি আসলে তো সেদিন পোলাপানদের নাওয়া,খাওয়া বন্ধ করে মাঠে থাকতে হতো। এটা
তো গেলো কেন্দ্রীয়ভিত্তিক মিছিল এবার আসি হল ভিত্তিক মিছিলে। হলের যেই কয় তলা আছে সেই
কয় তলা ভিত্তিক মিছিল। হলে যতোগুলো ডিপার্টমেন্ট আছে তাদের আবার আলাদা আলাদা মিছিল।এইসব তিক্ততার মধ্যেও
মজা ছিলো। সবার ভেতরে একটা ক্ষমতা ক্ষমতা ভাব ছিলো।
যখন দুই গ্রুপের দ্বন্দের কারণে ক্যাম্পাসে রাজনীতি একদম নিষিদ্ধ
হয়ে গেলো তখন শিক্ষকরা আমাদের পেয়ে বসলো। শিক্ষকরা আমাদের বলতে থাকলো এইবার পালাবি
কোথায়। তাদের স্বৈরাচারী শাসন শুরু হতে থাকলো
হল থেকে। কথা নাই বার্তা নাই হল প্রভোস্ট যখন তখন হলে এসে প্রত্যেক তলায় তলায় যেয়ে
ছাত্রদের ওমক সমস্যা,তমক সমস্যা বলে বকা দিতে থাকে। কিন্তু, হলে যে তাদের সীমাবদ্ধবতা
আছে এই কথা তারা স্বীকার করতে নারাজ। যতো দোষ সব ছাত্রদের। আবার যখন তখন হলে রেট দেওয়া
সেটা তো আছেই। এইবার যদি আমরা একাডেমিকের দিকে তাকাই, রাজনীতি থাকার সময় রাজনৈতিক এক
নেতার সাথে এক শিক্ষকের খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো এখন সেই শিক্ষক শুধু ঐ একজন রাজনৈতিক
নেতার জন্য পুরো ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। ইচ্ছে করে তাদের ক্লাস
নেন না সেই মহান শিক্ষক। এইসব সব সহ্য করা যায় কিন্তু যখন ঐ বিষয়টার জন্য শিক্ষার্থীদের
জীবন থেকে ৬ মাস নষ্ট করে দেন তখন বলেন শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে। আর শিক্ষকদের মন-মর্জিমতো
সবকিছু তো আছেই। এইসব কথা বলতে থাকলে মন থেকে শুধু কষ্টের কথায় বের হবে। তাই আজকে আর
না লিখে আমি আমার লেখার ইতি টানি।
আসলে আমাদের বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ সত্যিই একটু অবহেলিতো। আমাদের
এমন কোনো নায়ক নেই যে শুধু বাংলাদেশকে নিয়ে ভাববে। আমাদের সবখানে রাজনীতি আর স্বৈরাচার শাসন
বিদ্যমান। আমরা এমন একটা দেশ না পারি সিদ্ধান্ত নিতে বা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করাতে।
ঠিক তেমনই আমাদের দেশের ভেতরে সকল প্রতিষ্ঠানি নড়বড়ে। এইসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যদি আমারা
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করি তাহলে আমরা সবচাইতে বড় ভুল করবো। আমাদের যে
সীমাবদ্ধতা আছে এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। এটা যেমন মেনে নিতে হবে ঠিক তেমনি আমাদেরকে
এটাও মেনে নিতে হবে আমাদের প্রচুর সম্ভাবনাও আছে। কারন, আমাদের আছে মানবশক্তি, আমাদের
আছে উচ্চমানের মেধাবী মানুষ যারা বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে প্রস্তুত শুধু সঠিক দিক-নির্দেশনার
অভাবে করতে পারছে না।
No comments:
Post a Comment